ইউটিউব থেকে আয়, একাউন্ট তৈরি করা থেকে মনিটাইজেশন

আপনি যদি (Online Income) অনলাইন টাকা ইনকাম করার সহজ উপায় খুজেন, তাহলে (YouTube) ইউটিউব থেকে আয় করার পদ্ধতি আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ এবং লাভজনক হতে পারে। আজ, দেশে বিদেশে অনেক অনেক হাজার কিংবা লাখো YouTuber রয়েছেন, যারা নাকি কেবল নিজের YouTube চ্যানেল থেকে এতো টাকা উপার্জন করছেন যে তাদের অন্য কোনো কাজ বা চাকরি করার কোনো প্রয়োজন হচ্ছেনা। তাছাড়া এই YouTuber গুলো নিজেদের YouTube channel কেই business হিসেবে চলিয়ে মাসে হাজার হাজার ডলার আয় করছেন। অনেকেরা তো প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করছে। কিন্তু, এইটা তাদের কাজ এবং পরিশ্রমের জন্য তারা পাচ্ছেন।

এখন, যদি আপনিও “কিভাবে ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জন করবেন” এই ধারণা নিয়ে আছেন, তাহলে তার জবাব বা সমাধান আছে আমার কাছে। এখানে আমি আপনাদের ইউটিউব থেকে আয় করার সহজ উপায় খুবই সহজভাবে বুঝিয়ে দেব।
YouTube থেকে আয় করার পদ্ধতি এমনিতেই অনেক সহজ। কিন্তু, যদি আপনি এই ব্যাপারে কিছুই না জানেন তাহলে আপনার শুরুতে অসুবিধা হতে পারে। তাই, আমি আপনাকে ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য কি কি করতে হবে, কিসের প্রয়োজন হবে এবং কিভাবে নিজের YouTube চ্যানেল business শুরু করবেন তা শিখিয়ে দেব ইনশাআল্লাহ।


আমরা প্রথমে জেনে নেই এই আর্টিকেলে আমরা কি কি শিখবো।
• কিভাবে ইউটিউব (YouTube) থেকে আয় করবেন ?
• ইউটিউব থেকে কত টাকা (Money) আয় করা যায় ?
• ইউটিউব কিভাবে টাকা দেয় বা YouTube থেকে টাকা কিভাবে তুলবেন ?


তাহলে চলুন, এখন আমরা নিচে সব বিষয় গুলো ধারাবাহিকভাবে ভালোকরে জেনে নেই। তাছাড়া আমি আপনাকে এটাও বলে দেবো, নিচে আমি যা যা বিষয়ে আপনাকে বলবো সেগুলি ভালোকরে পড়বেন। প্রতিটি বিষয় ভালোকরে পড়লে আপনি সবকিছু বুঝতে পারবেন। কিছুটা সময় দেন, জিনিসগুলো বুঝেন আপনিও একদিন Successful YouTuber অবশই হতে পারবেন।

কিভাবে ইউটিউব আয় করা যায় ? ( How to Earn From YouTube)

YouTube থেকে টাকা বা ডলার আয় করার একমাত্র উপায় হলো, “নিজের YouTube একাউন্ট বা চ্যানেলে ইউনিক Video Upload করা”।
হুম, আপনি ঠিকই শুনেছেন। নিজের ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে তাতে ভিডিও আপলোড করে আপনিও টাকা ইনকাম করতে পারবেন। কেবলমাত্র এক-দুই টাকা নয়, লোকেরা ইউটুবে (YouTube) হাজার এবং লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছেন।

আসলে YouTube এমন একটি ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট যেখানে আপনিও সব রকমের Video পাবেন। যদি কিছু শিখতে চান “টিউটোরিয়াল ভিডিও”, সময় কাটানোর জন্য অনেক রকমের “funny videos” এবং অন্য সব রকমের ভিডিও আপনি এখানে দেখতে পাবেন।

কিন্তু, কথা হলো যে YouTube ওয়েবসাইটে এই video গুলি কারা দেন। আর কোথা থেকেই বা এতো লক্ষ লক্ষ ভিডিও YouTube এ আসে। এর জবাব হলো, আপনার আর আমার মতো লোকেরা ইউটুবে ভিডিও আপলোড করার কারণে এই লক্ষ লক্ষ video আমরা YouTube ওয়েবসাইট এ গিয়ে দেখতে পারি।


আপনি জানেন কি, লোকেরা নিজের সময় নষ্ট করে কেন ভিডিও বানিয়ে বানিয়ে ইউটুবে দেন ? তাদের লাভ কি ? আপনি কি এটা চিন্তা করে দেখেছেন?
দেখেন, যারা নিজের YouTube channel তৈরি করে ভিডিও আপলোড করছেন তারা এমনিতেই এতো কষ্ট করছেন না। তারা নিজের আপলোড করা প্রতি ভিডিও থেকে taka income করেন।


আসলে, YouTube এর এমন একটা পদ্ধতি আছে যাকে বলা হয় “Monetization”। আর, এই monetization প্রক্রিয়াটা চালু করার পর আপনিও নিজের আপলোড করা ভিডিও থেকে আয় করতে পারবেন, যেমনটি অন্যরা আয় করেন।


আসলে, monetization প্রক্রিয়া চালু করার পর, আপনার আপলোড করা video তে YouTube এবং Google AdSense এর তরফ থেকে কিছু বিজ্ঞাপন (advertisement) দেখানো হয়। এই বিজ্ঞাপন ভিডিও শুরু হবার আগে, মাঝখানে বা শেষে দেখানো হয়। তাছাড়া, আজকাল ভিডিওর মাঝেও ভিডিও আকারে ছোট ছোট বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। আর, যত বার লোকেরা আপনার video দেখবে তাতে তিন চার সেকেন্ড বিজ্ঞাপন দেখানো হবে ওই হিসাবে আপনার Google AdSense account এ টাকা জমা হতে থাকবে।

আর, আপনার YouTube video থেকে আয় করা টাকা Google AdSense থেকে নিজের ব্যাংক একাউন্টে তুলে নিতে পারবেন।


Note: Google AdSense গুগল এবং YouTube এর একটি ভাগ। গুগল এডসেন্স ব্লগার এবং ইউটিউবার দের নিজের ব্লগ বা YouTube video তে বিজ্ঞাপন লাগিয়ে টাকা আয় করার সুযোগ করে দেয়। গুগল এডসেন্স এর দ্বারা লোকেরা কত টাকা আয় করছেন তা জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। আপনি ইউটুবে monetization চালু করে নিজের এডসেন্স একাউন্ট সেখান থেকে বানিয়ে নিয়ে কাজ করতে পারবেন। চলুন তাহলে আমরা step by step জেনে নেই YouTube চ্যানেল বানিয়ে আমরা কিভাবে টাকা আয় করতে পারবো।

স্টেপ বাই স্টেপ YouTube থেকে আয় করার পদ্ধতি:

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে YouTube এর দ্বারা video আপলোড করে আপনি টাকা আয় করতে পারবেন। কিন্তু, তা সেটা তখনি সম্ভব যখন আপনি ধৈর‌্য ধরে প্রথমে নিজের YouTube চ্যানেলটি বানাবেন এবং সেট করবেন। চ্যানেল বানানোর থেকে টাকা ইনকাম করা পর্যন্ত আপনার অনেকটা কাজ ধৈর্য ধরে করতে হবে। তা করতে পারলে আপনি অবশই নিজের চ্যানেল থেকে আয় করা আরম্ভ করতে পারবেন এবং নিজের YouTube চ্যানেল কে একটা business হিসেবে দাড় করাতে পারবেন।


তাহলে চলুন ইউটিউব চ্যানেল দ্বারা টাকা কমানোর জন্য কি কি করতে হবে তা স্টেপ বাই স্টেপ জেনে নেই।

১. YouTube এ নিজের একটি চ্যানেল তৈরি করুন

সর্ব প্রথম এবং দরকারি কাজটা হলো, “নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল বানানো“। চ্যানেল ক্রিয়েট করার পর আপনি তাতে নিজের মন মতো videos আপলোড করতে পারবেন। কিন্তু, এখন কথা হলো “YouTube চ্যানেল কিকরে ক্রিয়েট করবেন ?” তাই তো। নিজের একটি চ্যানেল তৈরি করার জন্য আপনার প্রথমে “ইউটিউব ওয়েবসাইটে” যেতে হবে। ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার প্রথমে নিজের Gmail account details (আইডি এবং পাসওয়ার্ড) দিয়ে YouTube এ লগইন (Login) করতে হবে। আমি আগেই বলেছি, ইউটিউব Google এর একটি Product বা Service তাই ইউটুবে লগইন করতে হলে বা একাউন্ট বানাতে হলে আপনার কেবল জিমেইল আইডি আর পাসওয়ার্ড এর প্রয়োজন হবে।

আজকাল সবারই একটি জিমেইল একাউন্ট আছেই। আর আপনি নিজের সেই জিমেইল আইডি দিয়েই YouTube এ লগইন করে নিতে পারবেন। আপনার যদি Google account না থাকে, তাহলেও আপনি “জিমেইল এর ওয়েবসাইটে” গিয়ে জিমেইল একাউন্ট বানিয়ে নিতে পারবেন।

এখন নিজের চ্যানেলে গিয়েই (লগইন করে) আপনি ভিডিও আপলোড করতে পারেন। আপনার আলাদা চ্যানেল বানানোর কোন রকম প্রয়োজন নেই। কিন্তু, যদি আপনি নিজের একটি আলাদা ইউটিউব চ্যানেল বানাতে চান, তাহলে তা অবশ্যই পারবেন।

Youtube এ চ্যানেল কিভাবে তৈরি করবেন?

চ্যানেল বানানোর জন্য আপনার প্রথমে যা আমি বললাম, নিজের ইউটিউব একাউন্টে গিয়ে জিমেইল আইডি দিয়ে লগইন করতে হবে।

YouTube এ লগইন করার পর, আপনি ঠিক উপরে ডান দিকে কোনায় একটি ছোট্টো “icon এর লোগো” দেখবেন। আপনাকে সেই আইকন এ ক্লিক করতে হবে।

Icon টিতে ক্লিক করার পর আপনি একটি কয়েকটি মেনু দেখবেন। মেনুতে আপনার নাম ও “creator studio” বলে একটি অপসন দেখতে পাবেন। আপনাকে Creator studio অপসন টাতে ক্লিক করতে হবে।
Creator studio তে যাবার পর আপনি নিজের YouTube channel dashboard দেখতে পাবেন। এখানে আপনি ওপরে নিজের চ্যানেলের নাম এবং চ্যানেলের সাথে জড়িত সকল অপশনস পেয়ে যাবেন।
এখন নিজের চ্যানেল চালু করতে হলে আপনার প্রথমেই একটি কাজ করতে হবে, সেটি হলো “Verify YouTube channel”. হে, আপনাকে নিজের YouTube চ্যানেলটিকে ভেরিফাই করতে হবে আর তা আপনার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার দিয়ে। ভেরিফাই করার পর আপনি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করে টাকা আয় করতে পারবেন।

চ্যানেল ভেরিফাই করার জন্য আপনি, Channel dashboard এ গিয়ে বাম দিকে থাকা অপশনগুলি থেকে “Channel” এ ক্লিক করুন।
Channel অপশনে ক্লিক করার পর আপনি “Verify” লিংক দেখতে পাবেন। verify লিংকটিতে ক্লিক করুন এবং নিজের চ্যানেলকে আপনার নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে ভেরিফাই করে নিন। এরপর আপনি নিজের চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। তাছাড়া ভিডিও তে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকাও আয় করতে পারবেন।

আপনি যদি একই জিমেইলের অধীনে অন্য নামের নতুন চ্যানেল বানাতে চান তাহলে ইউটুবে লগইন করে, উপরে ডানদিকে প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করুন। তারপর creator studio অপশনের শেষে “Gear icon” এ ক্লিক করুন। এতে ইউটুবে Settings page খুলে যাবে। যেখান থেকে আপনি “Create a new YouTube channel” অপশনটি দেখতে পাবেন।

এখন “Create a new YouTube channel” লিংক টিতে ক্লিক করে নিজের মনের মত নাম দিয়ে একটি YouTube চ্যানেল তৈরি করতে পারবেন।
এখানে আমি আপনাদের নিজের চ্যানেল কিভাবে বানাবেন তা বললাম। এবার চলুন চ্যানেল বানানোর পর কি করতে হবে তা জেনে নেই।

২. তৈরিকৃত YouTube চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করুন

জেনে রাখা ভাল, চ্যানেল বানানোর পরেই যে আপনি নিজের ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে পারবেন তা নয়। টাকা কমানোর জন্য এখন আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। আর, সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো “নিজের চ্যানেলে ইন্টারেষ্টিং ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতে হবে”।

আমি আগেই বলেছি, ইউটুবে আপনি যা ভিডিও আপলোড করবেন সেগুলিতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আপনি গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন। আর তাই, আপনি কি ভিডিও আপলোড করছেন তা অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ বটে।

যদি আপনি ইউটিউব থেকে সত্যি taka income করতে চান, তাহলে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। আপনার নিজের চ্যানেলে অন্য কারোর ভিডিও আপলোড করতে পারবেন না। কেবল নিজে বানানো ইন্টারেষ্টিং এবং যা ভিডিও দেখে লোকদের পছন্দ হবে বা কাজে আসবে সেরকম ভিডিও বানাবেন এবং আপলোড করবেন।

ফলাফল স্বরূপ, লোকেরা আপনার ভিডিও বেশিকরে দেখবে এবং বিজ্ঞাপন ও বেশিকরে আপনার ভিডিওগুলিতে দেখানো হবে। আর আপনার ইনকাম ও বেশিকরে হবে।
মনে রাখবেন, যদি আপনি নিজে এমন জিনিসের ভিডিও বানান যেগুলি লোকেরা জানতে চায়, শিখতে চায় বা দেখে আনন্দ পায় তাহলে ধীরে ধীরে আপনার YouTube চ্যানেলে দর্শক, subscribers এবং ভিউ বাড়বে এবং আপনাকে success হতে কেউ থামাতে পারবেনা।

ইউটিউবে কেমন ভিডিও আপলোড করতে হবে ? চ্যানেলের বিষয় বা topic কি হবে ?
দেখুন, আমি আগেই বলেছি, আপনাকে নিজের ইউটিউব চ্যানেল এমন টপিক নিয়ে বানাতে হবে যা আজকাল লোকেরা ইন্টারনেটে খুজে বেড়ায়। তাই YouTube channel এমন বিষয়ের উপর বানাবেন যে বিষয়ে আজকাল মানুষের অনেক রুচি আছে। এতে আপনার বানানো ভিডিও অনেক লোকেরা দেখবে আর আপনার টাকা আয় করার সুযোগও বেশি হবে।

চিন্তার বিষয় যে, আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে কেবল লোকের রুচি থাকা বিষয়ে বা টপিকে চ্যানেল বানিয়ে ভিডিও আপলোড করলেই হবেনা। আপনার সেই বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে যেই বিষিয়ে আপনি ভিডিও বানাতে চান। তাই এইটা অবশই মনে রাখবেন, YouTube চ্যানেল business এ success হতে হলে আপনাকে এমন বিষয়ে ভিডিও বানাতে হবে যেই বিষয়ে ইউটুবে অনেক অনুসন্ধ্যান বা সার্চ হয় এবং যেই বিষয়ে আপনার অনেক জ্ঞান আছে।

আমি আপনাকে কয়েকটি এমন বিষয় বা টপিক বলে দিচ্ছি যেইগুলি ইউটুবে অনেক খুজাখুজি বা সার্চ হয় এবং আপনি সহজে এ বিষয়ে ভিডিও বানিয়ে নিতে পারবেন।
YouTube চ্যানেল বানানোর জন্য ৫ টি আইডিয়া (চ্যানেল কি বিষয়ে বানাবেন)

  1. Technology (টেকনোলজি ): ইন্টারনেটে ব্লগ বলুন আর ইউটিউব চ্যানেল বলুন, সবখানেই টেকনোলজি আর টেকনোলজি নিয়ে লোকেরা ইন্টারনেটে পোস্ট করছে। এর কারণ হলো, টেকনোলজি আজকাল খুবই জনপ্রিয় একটি বিষয় আর এই বিষয়ে আজকাল সবাই জানতে চায়। তাই এই বিষয়ে ভিডিও বানালে আপনার ভিডিও অনেকেই দেখবে এবং ভিউ বাড়বে, এডের ভিউ বাড়বে আপনার ইনকাম ও অনেক হবে।
  2. App review চ্যানেল: আজকাল android apps ব্যবহার করে না এমন কে আছে? আমরা সবাই নতুন নতুন apps মোবাইলে ইনস্টল করে মজা নেই। কিন্তু, সব apps এর কথা আমরা জানিনা আর তাই ইন্টারনেটে লোকেরা নতুন এবং ইন্টারেষ্টিং apps এর কথা জানার জন্য সার্চ করেন। তাই, আপনি গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে ভালো ভালো apps সম্পর্কে ভালোভাবে, তা দিয়ে কি কি উপকার পাওয়া যায় তা জেনে তার ভিডিও বানিয়ে নিজের চ্যানেলে আপলোড করতে পারেন।
  3. মোবাইল ফোন রিভিউ: নতুন নুতন মোবাইল ফোন রিভিউ করে আজ অনেকেই YouTube থেকে টাকা আয় করছেন। আর আপনিও চাইলে নিজের চ্যানেলে নতুন নতুন মোবাইলের রিভিউ করে তাদের ব্যাপারে কি কি ফিচার রয়েছে বা তা কিভাবে চালাতে হয়, কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে বলে ভিডিও বানাতে পারেন। আপনি যত ভালোকরে মোবাইলের ব্যবহার বা ফিচারগুলো সব ভেঙে বলবেন ততই লোকেরা আপনার ভিডিও পছন্দ করবে।
  4. Tutorial video বানিয়ে: শিক্ষার কোন শেষ নেই। আজকাল অনেকেই নিজেদের চ্যানেলে শিক্ষামূলক কিছু টিউটোরিয়াল ভিডিও আপলোড করে নিজের চ্যানেলকে successful করে ফেলছেন। এর কারণ হলো, টিউটোরিয়াল ভিডিও ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং তাই বিভিন্ন রকমের টিউটোরিয়াল লোকেরা ইউটিউবে সার্চ করেন। টিউটোরিয়াল ভিডিও বলতে, এমন কোনো বিষয়ে video বানানো যেখানে আপনি কিছু বিষয়ে বিস্তারিত বলছেন, মানে যেকোনো জিনিস কিভাবে করবেন, কিভাবে বানাবেন, জিনিষটার আদ্যোপান্ত।
  5. Food (খাবার) বানানোর video: যদি আপনি নতুন নতুন খাবার বানাতে পারেন, তবে আপনি নিজের food recipe র ভিডিও বানিয়ে YouTube এ success হতে পারেন। নতুন নতুন খাবারের আইটেম বানিয়ে সেগুলো বানানোর ভিডিও বানিয়ে তার সাথে আপনি কিভাবে খাবারটা বানালেন তা দেখিয়ে নিজের Food video চ্যানেল চালিয়ে নিতে পারবেন।

আমি আপনাদের কয়েকটি YouTube চ্যানেল বানানোর আইডিয়া দিলাম যেগুলি আজকাল অনেক জনপ্রিয় এবং যেসব বিষয়ে চ্যানেল বানিয়ে তাতে ভিডিও আপলোড করে লক্ষ লক্ষ টাকা কমিয়ে নিচ্ছে। তাই, আপনিও চাইলে এই বিষয়গুলিতে চ্যানেল তৈরি করে টাকা ইনকাম করতে পারেন।

আমরা উপরে, ইউটিউবে টাকা আয় করার জন্য ইটুব চ্যানেল কিভাবে বানাবো, কেমন ভিডিও আপলোড করবো তা জানতে পারলাম। এখন চলুন, আমরা সবথেকে প্রয়োজনীয় এবং YouTube theke taka আয় করার দরকারি স্টেপটি জেনে নেই যেটাকে বলে ইটুব বলে “Monetization”.

৩. ইউটিউবে monetization চালু করার নিয়ম:

ইউটুবে চ্যানেল বানানোর পর তাতে নিয়মিত ভালো ভালো ভিডিও আপলোড করার পর আপনার চ্যানেলে subscribers এবং views বাড়বে। কিছুদিন পর যখন আপনি নিজের চ্যানেলে ১০০০ subscribers এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ আওয়ার বা তার থেকে বেশি পেয়ে যাবেন তখন আপনি YouTube monetization এর জন্য apply করবেন।

Monetization apply করে active করার পর আপনার YouTube video তে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। আর ঐ বিজ্ঞাপন থেকে আপনি টাকা কামানো আরম্ভ করতে পারবেন।
নিজের চ্যানেলে monetization চালু করার জন্য প্রথমে আপনার কিছু জিনিসের ধারনা রাখতে হবে। সেই জিনিষগুলি হলো –

• আপনার YouTube চ্যানেলে কমপক্ষে ১০০০ subscriber থাকতে হবে।
• ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ আওয়ার বা ভিডিও ভিউ ঘন্টা থাকতে হবে। মানে, আপনার সব ভিডিও গুলি মিলিয়ে সর্বমোট কমপক্ষে ৪০০০ ঘন্টা ভিউ থাকতে হবে।


উপরের বিষয়গুলি বা শর্তগুলো আপনি পূরন করার পর monetization এর জন্য YouTube এ apply করতে পারবেন এবং YouTube team যদি আপনার চ্যানেলকে approve করে তাহলে আপনিও নিজের আপলোড করা video দ্বারা advertisement থেকে অনলাইন টাকা আয় করতে পারবেন।

YouTube এ monetization চালু করবো কিভাবে?

YouTube এ monetization চালু করার জন্য YouTube account থেকে “channel icon > creator studio > channel > monetization” এ যেতে হবে।
এখন monetization পেজে আপনি নিজের চ্যানেলে monetization চালু করার জন্য ৪ টি অপসন দেখতে পাবেন। সেই অপসন গুলি ভালো করে পড়ে এক এক করে পুরা করেন।

অপশনের দুই নম্বর স্টেপে গুগল এডসেন্সের জন্য একাউন্ট বানাতে হবে। তাই ভালোকরে নিজের এডসেন্স একাউন্ট বানিয়ে নিজের YouTube চ্যানেলকে তাতে connect করে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনার ভিডিও তে এই এডসেন্স একাউন্টের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে এবং বিজ্ঞাপন থেকে অর্জিত টাকা এই একাউন্টে জমা হবে। যেটা আপনি নিজের ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করে নিতে পারবেন কমপক্ষে ১০০ ডলার হবার পর।

লক্ষনীয় বিষয়, Monetization চালু করার সব স্টেপস গুলি পুরা করার পর আপনাকে কিছুদিন দাঁড়াতে হবে। কারণ, apply করার পর YouTube এর official team এর পক্ষ থেকে আপনার চ্যানেলকে review করা হবে। Review করে তারা দেখবে যে আপনার চ্যানেলটি বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য সব দিকদিয়ে যোগ্য কি না।

যদি তাদের কাছে যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়,তাহলে আপনার চ্যানেলকে YouTube team monetization এর জন্য approve করে দিবে। তারপর আপনার আর কোন দিকে তাকানোর টাইম নাই, শুধু ভালো ভালো ভিডিও বানিয়ে নিজের চ্যানেলে আপলোড করতে থাকবেন আর বিজ্ঞাপনের দ্বারা টাকা ইনকাম করতে থাকবেন।

৪. YouTube থেকে টাকা আয় করে সেগুলো কিভাবে তুলবো?

ইতোপূর্বেই আপনি জেনে থাকবেন যে, YouTube monetization চালু করার সময় আপনাকে Google adsense একাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে। আর, এই গুগল এডসেন্স থেকেই আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন (advertisement) দেখানো হবে আর আপনি টাকা আয় করতে থাকবেন।

এখন এডসেন্সের বিজ্ঞাপনের দ্বারা আপনি যত টাকা আয় করবেন তা আপনার বানানো গুগল এডসেন্স একাউন্টে জমা হতে থাকবে। আর, যখন আপনার এডসেন্সে ১০০ ডলার জমা হয়ে যাবে তখন সেই ১০০ ডলার আপনাকে এডসেন্স নিজে নিজেই আপনার ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করে দেবে। তারপর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই আপনার টাকা আপনার ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়ে যাবে।

কিন্তু এডসেন্স থেকে টাকা উঠানোর জন্য আপনাকে প্রথমে Google adsense এর payment অপশনে গিয়ে নিজের ব্যাংক একাউন্ট details ভালো করে দিতে হবে। এটা অবশই মনে রাখতে হবে, ভুল ব্যাংক একাউন্ট ইনফরমেশন দিলে আপনার টাকা আপনার ব্যাংকে কোনোমতেই আসবেনা। তাই, সঠিক এবং ভালো করে নিজের ব্যাংকের তথ্য গুগল এডসেন্স একাউন্টে add করতে হবে।

আমি আপনাদেরকে YouTube থেকে টাকা কিভাবে আয় করা যায়, এ ব্যাপারে সব কিছু বুঝিয়ে বলে দিলাম। আমি আপনাদের এটাও বললাম যে কেমন ভিডিও ইউটিউবে দিলে আপনার বেশি ভিউ হবে কিংবা লাভ হবে। কিন্তু, সব থেকে জরুরি কথাটা আমি এখনো আপনাদেরকে বলিনি। সেটা হলো, “ইউটিউবে চ্যানেল দ্বারা কত টাকা আয় করা যায়”? আপনিও কি এটা জানতে চান?

YouTube থেকে কত টাকা আয় করা যায়?

ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা উপার্জন আপনি তখনই করতে পারবেন যখন আপনি নিজের চ্যানেলকে monetization এর উপযুক্ত হবেন বা মনিটাইজেশন করবেন। তারপর আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে এবং আপনি বিজ্ঞাপন থেকে আয় করার সুযোগ পাবেন।

এখন খুবই আকর্ষনীয় কথা হলো, আপনি ইউটিউবে চ্যানেল বানিয়ে এবং ভিডিও আপলোড করে কত টাকা আয় করতে পারবেন? আপনার কি এতো ইনকাম হবে যাতে করে অন্য কোন কাজ বা চাকরি না করলেও চলবে?

চিন্ত করে দেখুন, ইউটুবে আপনি কত টাকা আয় করতে পারবেন তার সোজা জবাব কেউ আপনাকে কেউ কি দিতে পারবে? কিন্তু জনাব, অনেক লোকেরা ১০০০ ভিউ তে দুই থেকে তিন ডলার আয় করেন। মানে, যদি আপনার ভিডিওতে ১০০০ লোকে ভিডিও দেখেন তাহলে তাতে দেখানো বিজ্ঞাপনের দ্বারা আপনি ২ থেকে ৩ ডলার আয় করতে পারবেন।

তাহলে এখন ভাবেন, যদি আপনার চ্যানেলে আপলোড করা ভিডিওতে প্রতিদিন মোট ৫০০০ View হয়ে থাকে তাহলে আপনার প্রায় ১০ থেকে ১৫ ডলার বা তার থেকেও বেশি ইনকাম হতে পারে। আর যদি এমনই ইনকাম হয় প্রতিদিন তাহলে আমি মনেকরি অন্য কোনো চাকরি করার প্রয়োজন হবেনা আপনার।

আজ অনেকেই ইউটুবে ভিডিও আপলোড করে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে নিচ্ছেন। আর তা আপনিও করতে পারবেন কিন্তু কিছুটা সময় ধৈর‌্য নিয়ে লেগে থাকতে হবে। আপনি লক্ষ টাকা না কামাতে পারলেও একটা ভালো মানের YouTube চ্যানেল দ্বারা মানসম্মত আয় করে নিতে পারবেন। কেবল ভালো ভালো ভিডিও বানিয়ে নিজের চ্যানেলে নিয়মিত আপলোড করতে থাকুন। এতে আপনার ভিডিওতে ধীরে ধীরে ভিউ বাড়বে এবং YouTube সার্চ এ আপনার ভিডিও ভালো করে display হতে থাকবে।

যখন আপনি ৪০ থেকে ৫০ টি ভালো এবং নিজের তৈরিকৃত মূল্যবান ভিডিও নিজের চ্যানেলে আপলোড করে ফেলবেন তখন আপনি দেখবেন অনলাইন থেকে ভালো টাকা ইনকাম হতে থাকবে।

তাহলে সরাসরি বলা যায়, তাহলে আপনারা চ্যানেলে থাকা ভিডিওতে যদি প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০০ থেকে ১৫০০ ভিউ হয় তাহলে আপনি ২ থেকে ৩ ডলার রোজ আয় করতে পারবেন। মানে প্রতিদিন ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। এবং, যদি আপনার ভিডিওতে প্রতিদিন ৫০০০ থেকে ৬০০০ ভিউ হয় তাহলে দশ থেকে পনের ডলার মানে রোজ ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করে নিতে পারবেন।

এই টাকা কমানোর তালিকাটা আমি বিভিন্ন YouTuber দের ইনকাম দেখে আপনাকে বলেছি। তাই, আপনার ইনকাম আমার বলার মতো নাও হতে পারে। Google এডসেন্সের বিজ্ঞাপন থেকে আয় করা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। সেই বিষয়গুলো বা জিনিসগুলির মধ্যে, “CPC”, “CTR” অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনার আয় আমি যা বলেছি তা থেকে কম বা বেশি হতে পারে।

সবশেষে আমি বলতে চাই,
ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় আমি আপনাদেরকে সহজ ভাষায় স্টেপ বাই স্টেপ ভালো করে বুঝিয়ে দিলাম। তার সাথে, YouTube থেকে কত টাকা আয় করা যায় তা আমি আপনাদেরকে বললাম। এখন আমি আপনাদের একটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে দিতে চাই। আপনি নিজের চ্যানেলে আপনার নিজের বানানো ভিডিও আপলোড করবেন।

আর এটা অবশ্যই মনে রাখবেন যে, আপনি চ্যানেল ক্রিয়েট করেই টাকা ইনকাম করতে পারবেন না। আপনাকে প্রথমে অনেক ভালোকরে মানসম্মত কাজ করতে হবে। ভালো ভালো তথ্যমূলক ভিডিও বানাতে হবে যাতে করে লোকেরা আপনার ভিডিও দেখে কিছু শিখতে পারেন বা আনন্দ অনুভব করে।

প্রথমে টাকা আয় করার কথা একদম চিন্তা করবেন না। চ্যানেল তৈরি করে ১ থেকে ৩ মাস কেবল ভালো মানের ভিডিও দিবেন। ব্যাস, একবার আপনার চ্যানেলে থাকা ভিডিও লোকেদের ভালো লেগে গেলেই আপনার subscriber বাড়তে থাকবে। আর তখন আপনি নিজের চ্যানেল দিয়ে ভালো মানের টাকা আয় করতে পারবেন। নিজের চ্যানেলকে আপনি একটা business হিসেবে তৈরি করে নিতে পারবেন।

এই লেখাটি নিয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাকে নিচে অবশ্যই comment করবেন। ধন্যবাদ।